আধার রাতে আলোর খোঁজে

mymensingh shop.com

আধার রাতে আলোর খোঁজে
  • আধার রাতে আলোর খোঁজে_img_0

আধার রাতে আলোর খোঁজে

100 BDT
1


হাসান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, রাত্রি জাগরনের সাধনা ও অর্থ-সম্পদ সদাকা করার চেয়ে কঠিন কোন আমলের কথা আমার জানা নেই।
তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো তাহাজ্জুদগুজার লোকের চেহারা এত সুন্দর হয় কেন । তিনি উত্তরে বলেন তারা পরম করুনাময় এর সাথে একান্ত সময় কাটায়, তাই তিনি তার নূরের একটি অংশ তাদের পড়িয়ে দেন।
রাতের আঁধারে ইবাদতের দাড়াও এবং কোরআন তেলাওয়াত কর। সারারাত ঘুমিয়ে থেকো না । ঘুমাও তবে তা দ্বিজাগ্রস্ত ব্যক্তির মত। কারণ অনেক সময় মৃত্যু হঠাৎ এসে পাকড়াও করে । ফলে বিছানা থেকে তুলে তোমাকে কাফনে শুয়ে দেয়া হয়। কতই না উত্তম সেই আঁখিযুগল যেগুলো অশ্রু ঝরাই রহমানের ভয়ে ।
উম্মে সুলাইমান তার সন্তানকে বলতেন হে বৎস রাতে বেশি ঘুমিও না। কারণ রাতের অধিক ঘুম মানুষকে কেয়ামতের দিন গরীব করে ছাড়বে। হে বৎস যে আল্লাহকে চাই সে রাতে ঘুমাই না‌। কারণ যে রাতে ঘুমাই সে দিনে লজ্জিত হয়।
হে আমার চোখ রাতের আধারে অশ্রু জড়িয়ে আমাকে একটু সুখি করো। হতে পারে কঠিন কেয়ামত দিবসে তুমি এর কারণে সফল হবে।
গুনাহ: গুনাহ হলো কেয়ামুল লাইল আদায় করতে না পারার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক ‌। কারণ কিয়ামুল লাইল নেককার বান্দাদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ উপহার । আর গুনাগার এই উপহার পাই না।
জৈনেক আলিম একটি চরম সত্য কথা বলেছেন । পৃথিবীতে জান্নাতের সুখ উপভোগ করার মতো কোনো সোযোগ নেই ।কিন্তু রাত জেগে ইবাদতকারীরা প্রভুর সাথে যখন গভীর আলাপচারিতায় মগ্ন হয় , সে সময় তাদের সুখকে জান্নাতি সুখের সাথে সাদৃশ্য বলা যায়।
আল্লাহ তাআলা তাউস  (রা.)এর  উপর রহমত করুন। তিনি যখন বিছানার উপর শুতেন, তখন উত্তপ্ত করায়ের মতো ছটফট করতেন ,তারপর লাভ দিয়ে উঠে ফজর হওয়া পর্যন্ত নামাজ পড়তেন এরপর বলতেন জাহান্নামের স্মরণ আবিদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
মনসুর বিন মুতামির (র.)প্রতি রাতে তার ঘরের ছাদের উপর কেঁদে কেঁদে নামাজ পড়তেন । তার মৃত্যুর পর পাশের বাড়ির একটি ছোট্ট বাচ্চা তার মাকে বলল আম্মু ওই বাড়ির ছাদের উপর যে একটি বাচ্চা থাকতো,  কান্না করত তাকে এখন দেখি না যে।  মা বলল ব্যাটা সেটা কোন বাচ্চা ছিল না । তিনি ছিলেন মানসুর (র.)   তিনি সধ্য মারা গেছেন।

আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভ ছিল সালাফদের একমাত্র লক্ষ্য।  সালাফরা বয়স ৪০ অতিক্রম করলে তারা বিছানা গুটিয়ে নিতেন এরপর থেকে আর কখনো ঘুমাতেন না।

মালিক বিন দিনার (র.) বলেন, দুর্ভাগ্যর আলামত চারটি কলব শক্ত হওয়া । চোখ অশ্রুহীন হওয়া। আশা দীর্ঘ হওয়া এবং দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হওয়া ‌।
ইবাদত গুজার বান্দারা যখন দুনিয়ার বাস্তবতা ও প্রার্থীব জীবনের অসারতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়, তখন তারা চিরস্থায়ী জীবনের জন্য ক্ষণস্থায়ী জীবনের কামনা-বাসনা গুলোকে বিলীন করে দেয়। গন্তব্যহীন দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার পর যেহেতু তারা গন্তব্যের খোঁজ পেয়েছে তাই তারা কঠিন মেহনত করে দূরের গন্তব্যেকে কাছে নিয়ে আসে। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ দ্বারা প্রতিশ্রুত কিয়ামত দিবসের কথা স্মরণ করে। আজ তোমাদের সেই দিন যে দিনের ওয়াদা তোমাদের দেয়া হয়েছিল। সূরা আম্বিয়া আয়াত ১০৩.
উবাই বিন ওয়ারদ (র) তার এক জ্বালাময়ী ভাষণে বলেন । যদি আল্লাহর দিকে প্রতিযোগিতায় কাউকে তোমার আগে যেতে না দেওয়ার সামর্থ্য তোমার থাকে তবে তাই কর।
ভাই আমার,
দেখলে তো সালাফগণ কিভাবে রাত্রি যাপন করতেন । কিভাবে তারা সময়ের মূল্যায়ন করতেন। কিন্তু আফসোস আমরা কোন পরোয়া ছাড়া আমাদের সময় ও জীবনকে নষ্ট করে চলছি, হেলায় কেটে যাওয়া সময়ের জন্য একটু মায়াও জাগে না আমাদের মনে, যেন সময়ই সবচেয়ে নগণ্য ও তুচ্ছ বস্তু আমাদের কাছে , অথচ প্রতিটি মিনিট মূল্যবান সম্পদ। যে নিশ্বাস আমরা ছেড়ে দিই সেটি আর কখনো ফিরে আসবে না । এই জীবনের প্রতিটি অংশের হিসাব নেয়া হবে । তাই হিসাবের জন্য তৈরি হও , সময়কে মূল্যায়ন কর।
দায়গ্রাম রহমতুল্লাহি আলাই এভাবে দোয়া করতেন হে আল্লাহ আমি আপনার সাক্ষাৎ পছন্দ করি সুতরাং আপনিও আমার সাক্ষাৎ পছন্দ করুন।
রাতে কেবল সে-ই ইবাদত করতে পারে , যার ইচ্ছা দৃঢ়, মনোবল শক্ত। আর জানোই তো রাতের নামাজের মত কবর জীবনের জন্য উপকারী আর কোন আমল নেই।
ঘুম তোমাকে তোমার স্বপ্ন পূরণের পথ থেকে বিমুখ করে রেখেছে। জান্নাতের সুরম্য প্রাসাদ থেকেও। যেখানে তুমি আজীবন থাকবে। মৃত্যু নেই সেখানে, আরামদায়ক তাঁবুতে বসে সুন্দরী সঙ্গিনী নিয়ে মত্ত থাকবে তুমি সেখানে। এসব পেতে চাইলে ঘুম থেকে উঠে যাও। এই ঘুমের চেয়ে কুরআন তেলাওয়াত করে তাহাজ্জুদ পড়া অনেক উত্তম।

আল্লাহর ইবাদতের রত ব্যক্তি আর গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তির মাঝে একটি বিশাল পার্থক্য! একজন চির শান্তির জান্নাতের নেয়ামত সমূহ পেয়ে ধন্য , আরেকজন চির অশান্তির জাহান্নাম পেয়ে দুর্ভাগা। আমি মাঝেমধ্যে নিজেকে কেয়ামতের মাঠে কল্পনা করি। তখন ভয়ে আমার চোখ প্লাবিত হয় । শরীরের জোড়াগুলো ঢিলা হয়ে যায়।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ওই ব্যক্তি যে আল্লাহ তাআলা থেকে বিমুখ হয়ে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । তার চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ওই ব্যক্তি যে নিজেকে বাদ দিয়ে মানুষজন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
তাহাজ্জুদ আদায়ে সহায়ক কিছু উপদেশ।
অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা । কারণ বেশি খেলে পানিও বেশি খেতে হয় , এতে শরীরের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেয়ে ঘুম প্রবল হয়ে ওঠে । ফলে রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়া কঠিন হয়ে পড়ে।

দিনের বেলা শরীরকে খুব বেশি ক্লান্ত করে দেই এমন কর্ম থেকে বিরত থাকা । কারণ এর ফলে শরীরের অঙ্গ পতঙ্গ ও স্নায়ু কোষ দুর্বল হয়ে পড়ে । কাজেই রাতে খুব ভারী ঘুম আসে।

দুপুরে কিছুক্ষণ ঘুমানো এটা সুন্নত বটে আর কেয়ামুল লাইয়ের জন্য সহায়ক।
দিনে গুনাহ করা থেকে বিরত থাকা ।‌কারণ গুনাহ কলবকে শক্ত করে দেয় এবং আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেই।
অন্তরে দুনিয়ার দীর্ঘ আশা লালন না করা। তাকওয়া অবলম্বন করা। কিয়ামত দিবস ও জাহান্নামের বিভীষিকা সম্পর্কে চিন্তা করা।
আল্লাহতালা আমাদের সকলকে কিয়ামুল লাই আদায় করে তার সন্তুষ্টি এবং আমাদের পাপ গুলো ঝেড়ে ফেলার তৌফিক দান করুক। আমিন